সন্ধ্যা নেমেছে গ্রামে। জানালার ফাঁক গলে একরাশ সোনালি আলো পড়েছে ঘরের মেঝেতে। রানুর হাতে তখনও আঁচল গুঁজে রাখা, কিন্তু কাজ শেষ। সে ধীরে ধীরে এসে বসে পড়ে আলনার সামনে, একটু দম নেওয়ার জন্য।
আজ তার নিজের জন্য কিছু সময়—বাচ্চারা খেলছে উঠোনে, শ্বাশুড়ি রান্নাঘরে পিঠে বানাচ্ছেন, আর স্বামী এখনো বাজার থেকে ফেরেনি।
ঘরের কোণায় রাখা কাঠের আলনার সামনে বসে, রানু চুপ করে নিজের প্রতিফলন দেখছিল আয়নায়। পরনে তার প্রিয় হলুদ ব্লাউজ আর রঙচঙে শাড়িটা—বিয়ের পর প্রথম পূজার সময় নেওয়া হয়েছিল। এতদিন পর আবার আজ এটা পরল, এমনিই, মনের খুশিতে।
চুলগুলো ধীরে ধীরে এক পাশে নামিয়ে আনে সে। আয়নায় তাকিয়ে দেখে, সময় যেন তার চোখে একটুও বদল আনেনি—যদিও বাস্তবতা বলছে, রানু এখন একজন মা, গৃহিণী, দায়িত্বের প্রতীক।
কিন্তু সেই আয়নার সামনে বসা রানু নিজের মধ্যে খুঁজে পায় সেই পুরনো রানুকেই—যে স্বপ্ন দেখত, গান গাইত, চুপিচুপি কবিতা লিখত।
এক ফাঁকে সে পেছন থেকে শোনে তার ছোট ছেলে বলছে,
"মা, তুমি খুব সুন্দর লাগছো আজ।"
রানুর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। সে জানে, আজ না হোক—এই মুহূর্তটা তার।
0 Comments